টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইড
![]() |
ছবিঃ টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ টাওয়ার(Tanguar Haor Watch Tower) |
টাঙ্গুয়ার হাওরে ২ দিন ১ রাতের ট্যুর প্ল্যানঃ
১)টাঙ্গুয়ার হাওড়
২)নিলাদ্রি লেক
৩)লাকমা ছড়া
৪)বারেকের টিলা
৫)যাদুকাটা নদী
৬)শিমুল বাগান
![]() |
ছবিঃ নিলাদ্রি লেকে নৌকা ভ্রমণ (Boat Ride@ Niladri Lake Sunamganj) |
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যেভাবে যাবেনঃ
প্রতিদিন ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মামুন ও শ্যামলী পরিবহণের বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় এনা পরিবহণের বাস। এসব বাসে এন-এসিতে জনপ্রতি টিকেট কাটতে ৫৫০ টাকা লাগে । আর সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘন্টা সময় লাগে।
সিলেটে থেকে সুনামগঞ্জ যেভাবে যাবেনঃ
সিলেটের কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যাবার লোকাল ও সিটিং বাস আছে। সিটিং বাস ভাড়া ১০০ টাকা । অথবা শাহজালাল মাজারের সামনে থেকে লাইট গাড়ি তে ২০০ টাকা ভাড়ায় সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যেতে প্রায় দুই ঘন্টার মত সময় লাগবে।
সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরে যেভাবে যাবেনঃ
সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রীজের কাছে লেগুনা/সিএনজি অথবা বাইকে করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর পর্যন্ত লেগুনা ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা , ১ লেগুনাতে ১২ জন বসা যায় । সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা এবং বাইক রিজার্ভ ২০০ টাকা আর ১ বাইকে ২ জন বসা যায় । তাহিরপুর যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা ।
![]() |
ছবিঃ টাঙ্গুয়ার হাওরে গোসল করার দৃশ্য (Taking Bath @ Tanguar Haor) |
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়াঃ
নৌকা ভাড়া করতে কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখুন যেমন নৌকায় বাথরুম আছে কিনা, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে মোবাইল চার্জ দেওয়া, লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা ব্যবস্থা আছে কিনা। নৌকা ভাড়া করতে দরদাম করে নিন। নৌকা ভাড়া মূলত ৩টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। নৌকায় ধারণ ক্ষমতা, নৌকার সুযোগ সুবিধা এবং সিজনের উপর। ১ রাত নৌকায় কাটাতে চাইলে ছোট নৌকায় ৩৫০০-৫০০০ টাকা । মাঝারি নৌকায় ৭০০০-১০,০০০ টাকা এবং বড় নৌকায় ৭০০০ থেকে ২০,০০০ পর্যন্ত খরচ হতে পারে । রান্নার জন্য নৌকার মাঝির সাথে আগেই কথা বলে নিবেন । নিজেরা বাজার করে নৌকায় উঠবেন অথবা খরচের টাকা দিলে মাঝিরা নিজেরাই বাজার করে রান্নার ব্যবস্থা করে ফেলবে।
![]() |
ছবিঃ লাকমা ছড়া (Lakma Chora) |
কোথায় খাবেনঃ
সুনামগঞ্জে যে কয়েকটি খাবারের হোটেল রয়েছে তার মধ্য হোটেল রোজ গার্ডেন অন্যতম । এই রেস্তোরার পরিবেশ মোটামুটি ভালো এবং এখানে সুলভ মূল্য ভালো খাবার পাওয়া যায় । আর যেহেতু এটা আমাদের নৌকা ভ্রমণ তাই সকল খাবার হবে নৌকায় । আমরা তাহিরপুর থেকে বাজার সেরে নৌকায় উঠেছিলাম । আমাদের দুপুরের খাবার ছিলো হাওড়ের তাজা আইড় মাছ, কালিবউশ মাছের ভর্তা , শুঁটকির ভর্তা ডাল ,ভাত রাতের বেলায় আমাদের খাবারের আয়োজন ছিলো রুই মাছের বারবিকিউর সাথে হাসের মাংশ এবং পরটা । পরের দিন সকালে আমাদের সকালের খাবার ছিলো ডিম খিছুড়ি । রান্না বান্নার সকল কাজ মাঝিরা করেছে ।
![]() |
ছবিঃ লাকমা ছড়া (Lakma Chora) |
টাঙ্গুয়ার হাওরে আমাদের ভ্রমনের বিস্তারিত বিবরণঃ
তাহিরপুর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ টাওয়ারঃ
তাহিরপূর পৌঁছানোর পর তাড়াতাড়ি ট্রলার রিজার্ভ করে বাজার সেরে নিবেন । টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ভ্রমণকারী সকল পর্যটক ১ম দিনের দুপুর পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে এবং টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাবনে সময় কাটায় । ১ম দিনের গোসল এবং দুপুরের খাবার ওয়াচ টাওয়ারের আশে পাশে সারে । টাঙ্গুয়ার হাওরের স্বচ্ছ জলে গোসল করা মিস করবেন না । তবে সাতার না জানলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরে গোসল করতে নামবেন ।
টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ টাওয়ার থেকে টেকের ঘাটঃ
টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচ টাওয়ার থেকে টেকের ঘাট যেতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগে । টেকের ঘাঁটে থাকতে চাইলে এখানে কোন হোটেল নেই তাই ট্রলারই একমাত্র ভরসা । আমরা ট্রলারে রাত্রি যাপন করেছি এবং সকালের নাস্তা সেরে ট্রলারকে বিদায় দিয়েছিলাম । রাতে নৌকাতে থাকতে চাইলে টেকের ঘাট থাকার চেষ্টা করবেন । কারন এখান থেকে নিলাদ্রি লেক এবং লাকমা ছড়া খুব কছাকাছি ।
টেকের ঘাট থেকে নিলাদ্রি লেকঃ
টেকের ঘাঁটে থেকে নিলাদ্রি লেকে হেঁটে যেতে সময় লাগে ৫ মিনিট । পড়ন্ত বিকেলে আমরা ১ টি নৌকা রিজার্ভ নিয়েছিলাম নিলাদ্রি লেকে ঘুরার জন্য , নৌকার রিজার্ভ ভাড়া ১০০ টাকা ।
টেকের ঘাট থেকে লাকমা ছড়াঃ
টেকের
ঘাঁটের কাছে লাকমা ছড়া এবং নিলাদ্রি লেকের অবস্তান । বাইকে ছড়ে টেকের
ঘাঁট থেকে লাকমা ছড়া যেতে প্রায় ৫ মিনিট সময় লাগে এবং আপ ডাউন বাইক
রিজার্ভ ভাড়া ১০০ টাকা । আর হেটে যেতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে ।
টেকের ঘাট থেকে শিমুল বাগানঃ
আমরা শিমুল বাগান , জাদুকাটা নদী এবং বারিক্কা টিলা ঘুরে , সুনামগঞ্জে ফিরে যাওয়া জন্য বাইক রিজার্ভ করে নিলাম । বাইক রিজার্ভ ভাড়া ৩৫০ টাকা । আর ১ বাইকে ২ জন বসা যায় । সেই হিসাবে আমাদের জন প্রতি ভাড়া পড়েচে ১৭৫ টাকা করে । শিমুল বাগানের যাওয়ার সময় জাদু কাটা নদী পার হতে হয় ট্রলারে ছড়ে , ট্রলার ভাড়া জন প্রতি ৫ টাকা করে । শিমুল বাগানে প্রবেশ ফি ২০ টাকা
শিমুল বাগান থেকে বারিক্কা টিলাঃ
শিমুল বাগান থেকে জাদু কাটা নদী পার হয়ে সামান্য কিছু দূর গেলেই পড়বে বারিক্কা টিলা । বারিক্কা টিলাতে একটি ভিও পয়েন্ট রয়েছে । উঁচু এই টিলার ওপর থেকে ভারতের মেঘালয়ের বড় বড় পাথুরে পাহাড়ের সৌন্দর্য ও যাদুকাটা নদীর রূপ একসাথে উপভোগ করতে পারবেন।
![]() |
ছবিঃ লাকমা ছড়া (Lakma Chora) |
টাঙ্গুয়ার হাওরে থাকার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে তাহিরপুরে সরকারি ডাকবাংলো এবং ইউনও রেস্ট হাউস এ রুম নিতে পারেন ( এক্ষত্রে রুম আগে বুকিং দিতে হয়) । রুম ভাড়া ৩০০ টাকা । সরকারি ডাকবাংলোর কেয়ারটেকারের এর মোবাইল নাম্বার । কৃপেশ ( ডাকবাংলো ) –০১৭২৪-৯৬৮১৬১ বিপেন ( ইউনও রেস্ট হাউস ) – ০১৭৬২-২২৭৯৮০ ।
![]() |
ছবিঃ শিমুল বাগান (Shimul Bagan Sunamganj) |
হাওর ভ্রমণকালে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিবেন। হাওরে রওনা হবার আগে তাহিরপুরে থানায় আপনার নিরাপত্তার জন্যে জিডি করে নিন। যে কোন কিছুর জন্যে দামাদামি করে নিবেন। একসাথে গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে। টর্চ লাইট , পাওয়ার ব্যাংক, খাবার পানি, ছাতা ইত্যাদি নিতে ভুলবেন না ।
![]() |
ছবিঃ নিলাদ্রি লেক (Niladri Lake) |
0 Comments