গাজীপুরের বিখ্যাত মাটির ঘর রেস্টুরেন্ট
দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। বর্তমানে মাটির ঘর আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। কিছুদিন আগেও প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো অসংখ্য মাটির ঘর। কালের আবর্তে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন প্রায় বিলুপ্ত এই মাটির ঘরের ঐতিহ্য। গাজীপুরের কালীগঞ্জে পাবেন ‘মাটির ঘর’ এর দেখা। মূলত এটি রেস্টুরেন্ট। কিন্তু আপনি সেখানে পাবেন গ্রামীণ পরিবেশ। সেই সাথে পাবেন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য আর প্রাণজুড়ানো খাবার। চারিদিকে প্রচুর গাছপালা। বেশ আরামদায়ক পরিবেশ। ভিতরে গাড়ি পাকিংয়ের জায়গা। একপাশে খঁড় ও বাঁশ দিয়ে বানানো ছাঁউনি। ভিতরে বাঁশ দিয়ে বানানো বসার জায়গা।
এই রেস্টুরেন্টখানা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছুটির দিনে বেশ ভীড় হয় । সোশ্যাল মিডিয়াতেও মাটির ঘরের গুণগান চলে তাই গাজীপুরে হওয়া সত্ত্বেও ছুটির দিনে রেস্টুরেন্টের আসে পাশে রীতিমতো মেলা বসে যায়।
মাটির ঘরের ঠিক পাশেই খানিকটা খোলা জায়গা, সেখানে কিছু কাঠের বেঞ্চ আর হ্যামক রাখা। শেষ প্রান্তে একটা ছনের কুঁড়েঘর । পুরোটা জায়গা জুড়ে গাছের সমারোহ। আম, কাঁঠাল, কামিনী, দাতিনা,
বাঁশ, মানিপ্ল্যান্ট, সেনসেভেরিয়া, কচু, পাম,
অর্কিডসহ আরও অনেক গাছের আনাগোনা। পুরো এলাকা প্রায়
তিন বিঘা হলেও রেস্টুরেন্টের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কেবল একখানা টিনের চারচালা মাটির ঘরটি।
বেশ পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন। প্রায় ৩৩ জন একসঙ্গে এখানে বসে
খেতে পারে । এই রেস্টুরেন্টটির সবখানে মাটির স্পর্শ। ঘরগুলো মাটির তৈরি। ঘরের ভেতরে
ঢুকতেই শরীর আর মন শীতল হয়ে যাবে। টেবিলগুলো সবই কাঠের তক্তা দিয়ে বানানো, এখানে বসার আসন তৈরি করা হয়েছে গাছের
গুঁড়ি দিয়ে। খাবার পরিবেশিত হয় মাটির বাসন-কোসনে। পানির পাত্র মাটির কলসি। মাটির ঘর রেস্টুরেন্টে বেশির ভাগ মানুষ আসে পরিবার পরিজন নিয়ে । মনের
আনন্দে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায়। এখানকার নিরিবীলি গ্রামীণ পরিবেশ ও নির্মল প্রকৃতির মাঝে
পরিবার-প্রিয়জনের সাথে একান্তে দারুন কিছু সময় কাটাতে পারবেন। সেই সাথে
পাবেন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য মেশানো পরিবেশে বসে খাবার খাওয়ার সুযোগ।
মাটির ঘর রেস্টুরেন্ট কখন যাবেন:
রেস্টুরেন্টটি খোলা থাকে প্রতিদিন দুপুর ১২.৩০ থেকে বিকেল ৬.৩০ পর্যন্ত । নিজস্ব গাড়ি থাকলে ভালো । লোকজন বেশী হলে মাইক্রোবাস ভাড়া করেও আসতে পারেন। ছুটির দিনে অনেক ভীড় হয়। দুপুর ১২ টা থেকে ১.০০ এর মধ্যে যেতে পারলে আসন পাবেন সহজেই। দেরি করলে অন্যদের ঘাড়ের পিছনে দাড়িয়ে থেকে লাইন ধরতে হবে এবং অন্যের খাদ্য গ্রহণ দেখতে হবে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ম্যানেজার আবির ভাইয়ের সাথে (০১৭১৬৮৮৩১২০) । রেস্টুরেন্ট মূলত দুপুরের খাবারের জন্যই। রাতে ভোজনের ব্যবস্থাও করা হয়, আগে থেকে ফোন দিয়ে রাখলে। লোকজন বেশি হলে তবে দুপুরে গেলেও আগে থেকে ফোনে রিজার্ভেশন রাখাটাই ভালো। দুপুরে ২৫-৩০ জনের খাবার তৈরি হয়, প্রতিদিন ভিন্নতা থাকে। আগে থেকে না জানালে তাই খাবারের নিশ্চয়তা দেয়া কঠিন।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকার ৩০০ ফিটের রাস্তার শেষ মাথায় গিয়ে পাবেন কাঞ্চন ব্রিজ। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে হাতের বামে ‘ঢাকা সিটি বাইপাস’ রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে পাঞ্জোরা পৌঁছাবেন। সেখানেই পেয়ে যাবেন ‘মাটির ঘর’। আর হাতে একটি স্মার্ট ফোন থাকলে গুগল ম্যাপে সার্চ করেও খুব সহজেই চলে যেতে পারবেন এখানে।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে প্রায় ১ ঘন্টার দুতত্ব । কুড়িল বিশ্বরোডের পুর্বাচল হাইওয়ে অর্থাৎ ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে মাটির ঘর রেস্টুরেন্ট যাওয়া যায়৷ ঢাকার যে কোন স্থান থেকে কুড়িল বিশ্বরোড এসে ৩০০ ফিট রাস্তার প্রান্ত থেকে সিএনজি, লোকাল প্রাইভেট কার বা লেগুনা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ কাছে বাইপাস মোড়ে চলে আসুন । কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত বিআরটিসি বাস ভাড়া ২৫ টাকা। বাইপাস মোড় থেকে মাটির ঘর রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত অটো পাবেন , অটো রিজার্ভ ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা নিবে ১ অটোতে ৬ জন বসতে পারবেন । এছাড়াও কাঁচপুর ব্রীজ পাড়ি দিয়ে ভূলতা হয়ে এবং টঙ্গী মিরের বাজার বাইপাস রাস্তা ধরে মাটির ঘর রেস্টুরেন্ট যেতে পারবেন।
মাটির ঘর রেস্টুরেন্টের খাবারের ম্যানুঃ
খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম বা 'প্যাকেজ' নেই, পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারবেন। তবে ছুটির দিনে অতিথির চাপ একটু বেশি থাকে। আগে থেকে বুকিং না দিলে খাবারের নিশ্চয়তা দেয়া মুশকিল। নীচে খাবারে মূল্য তালিকার ছবি দিলাম । ম্যানেজারের নাম্বার ০১৭১৬৮৮৩১২০
![]() |
ছবিঃ মাটির ঘর রেস্টুরেন্টের খাবারের মুল্য তালিকা |
খাবারের মেনুতেও বেশ বৈচিত্র আছে রেস্তোরাঁয় মূল খাবার হিসেবে থাকে দেশি লাল চালের ভাত, চিনিগুঁড়া চালের খুদের চচ্চড়ি, বাঁশফুল চালের ভাত,বিরই চালের ভাত,বাউলা চালের ভাত, ভর্তা, চ্যাপা শুঁটকি ভুনা সহ কয়েক পদের ভর্তা, পাঁচমিশালী সবজি, তিনপদী ডাল, রুই/চিংড়ি/বোয়াল মাছ, দেশি মুরগীর মাংস, রাজহাঁসের মাংস, বানানো সালাদ, কচুমালার চপ, ইলিশ মাছ ভর্তা, পুঁটি শুঁটকির সিঁদল, শিমবিচি দিয়ে দেশি মুরগি, বাটা মাছের পাতুরি, তেঁতুল টকে পঞ্চপদী ডাল আর শসা টমেটোর স্যালাড, মিষ্টান্ন: বগুড়ার লাচ্ছা সেমাই, ছানা পিঠা: ফুল পিঠা, ঝিনুক পিঠা, শামুক পিঠা ,পানীয়: দইয়ের লচি। খেজুর গুড়ের মহিষের দই, কফি ,দইয়ের লাচ্ছি ও মৌসুমি ফলের জুস সহ পাওয়া যায় আরো অনেক কিছু ।
মাটির ঘর রেস্টুরেন্টের ঠিকানা:
মাটির ঘর, ঢাকা সিটি বাইপাস, ১৭২০ পানজোরা। (৩০০ ফুট কাঞ্চন ব্রিজ থেকে হাতের বামে ৭ কিলোমিটার)। কাঞ্চন ব্রিজ থেকে উলু খোলা যাওয়ার পথে জোড়া পেট্রোল পাম্পের সাথে মাটির ঘর রেস্টুরেন্টের অবস্তান । তবে গাড়ীর ড্রাইভারকে মাটির ঘর রেস্টুরেন্ট বললেও চিনবে ।
ফোন: ০১৭১৬৮৮৩১২০।
মাটির ঘর রেস্টুরেন্টের ফেইসবুক ঃ https://www.facebook.com/মাটির-ঘর-149011152261757/
মাটির ঘর রেস্টুরেন্টের গুগুল মেপ লিংকঃ https://goo.gl/maps/pbLkwbc1VMNAkHBz8
0 Comments