১৮৩ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আহসান মঞ্জিল । Ahsan Manzil Dhaka | Ahasan Monzil History of Dhaka
আহসান মঞ্জিল ভ্রমণ গাইড
আহসান মঞ্জিল বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায়
অবস্থিত । এটি ব্রিটিশ ভারতের উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নবাব পরিবারের বাসভবন ছিল। এ ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে জালালপুর পরগনার (বর্তমানে ফরিদপুর-বরিশাল)
জমিদার শেখ ইনায়েত উল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে একটি বাগান বাড়ি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র বাগান বাড়িটি এক ফরাসি বণিকের কাছে
বিক্রি করে দেন। ফরাসিরা বাণিজ্য কুটির হিসেবে এটি ব্যবহার করতেন। ১৮৩০
সালে বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গণির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এই
কুঠিটি ক্রয় পূর্বক সংস্কার করে বসবাস শুরু করেন। নওয়াব আবদুল গণি ১৮৬৯
সালে প্রাসাদটি নতুন করে নির্মাণ করেন।
সমগ্র আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্ব পাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা
হয় প্রাসাদ ভবন। পশ্চিমাংশের আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে
বলা হয় অন্দরমহল। প্রাসাদ ভবনটি আবার দুটি অংশে বিভক্ত। মাঝখানে গোলাকার
কক্ষের ওপর অষ্টকোণ বিশিষ্ট উঁচু গম্বুজটি অবস্থিত। পূর্বাংশে দোতলায়
বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার, কার্ডরুম ও তিনটি মেহমান কক্ষ এবং পশ্চিমাংশে একটি
নাচঘর, হিন্দুস্তানি কক্ষ এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। নিচতলায় পূর্বাংশে আছে ডাইনিং হল,
পশ্চিমাংশে বিলিয়ার্ড কক্ষ, দরবার হল ও কোষাগার।
জমিদারি উচ্ছেদ আইনে ১৯৫২ সালে ঢাকার নবাব এস্টেট সরকার অধিগ্রহণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নবাব পরিবারের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা
বিদেশে পাড়ি জমান। এ দেশে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বিরাট এই প্রাসাদ ভবনের
রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষম ছিলেন না। ফলে এটি ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে।
১৯৭৪ সালে নবাব পরিবারের উত্তরসূরীরা আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করে
দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান ভবনটির রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে, ১৯৭৪ সালের ২
নভেম্বর, প্রাসাদ ভবনটি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। এরপর
সংস্কার করে এখানে জাদুঘর ও পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। ১৯৮৫
সালের ৩ নভেম্বর আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তৎসংলগ্ন চত্বর সরকার অধিগ্রহণ করে
সেখানে জাদুঘর স্থাপনের কাজ শুরু করে। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান
মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত
করে দেওয়া হয়।
আহসান মঞ্জিলের ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টি কক্ষ বিভিন্ন প্রর্দশনীর জন্য
উপস্থাপন করা হয়েছে। নয়টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রাপ্ত
এবং ফ্রিৎজ কাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা ছবির সাথে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য আছে নওয়াব আমলের ডাইনিং রুম,
নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, আলমারি, সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালাবাসন,
নওয়াবদের অতি বিশ্বস্ত হাতির মাথার কঙ্কাল গজদন্তসহ, নওয়াব আমলের বিভিন্ন
ধরনের অলংকৃত রুপা ও ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন ধরনের
তৈলচিত্র, ফুলদানি, আতরদানি, পানদান, নবাবদের ড্রয়িং রুম, নাচঘর, সোনা ও
রুপার তারজালিকাজ আহসান মঞ্জিলের মডেল। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে সংগৃহীত
নিদর্শন সংখ্যা মোট চার হাজার ৭৭টি।
প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি দর্শকের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০
টাকা, বাংলাদেশি শিশু দর্শক পাঁচ টাকা আর বিদেশি দর্শকের জন্য ৭৫ টাকা।
প্রতিবন্ধীদের কোনো টিকিট ক্রয় করতে হয় না। আগে থেকে আবেদন করলে
ছাত্রছাত্রীদের বিনা মূল্যে জাদুঘর দেখতে দেওয়া হয়। বহিরাঙ্গনে ভাড়ার
বিনিময়ে চলচ্চিত্রায়ণ করা যায়। একজন দর্শক এখানে এসে ভ্রমণের মাধ্যমে
চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি ঐতিহাসিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
আহসান মঞ্জিল গ্রীষ্মকালে শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে
বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট এবং শীতকালে সকাল ৯টা ৩০মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট
পর্যন্ত খোলা থাকে, সব ঋতুতে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা
থাকে। বৃহস্পতিবার জাদুঘর সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। এ ছাড়া সরকারি ছুটির
দিনেও জাদুঘর বন্ধ থাকে।
0 Comments