নুহাশপল্লী ভ্রমণ গাইড
ঢাকা - ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালী গ্রাম। ওই গ্রামেই ১৫ বছর আগে নুহাশ পল্লী তৈরি করেন হুমায়ুন আহমেদ। গাজীপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পল্লীর অবস্তান । ১৯৮৭ সালে ২২ বিঘা জমির উপর স্থাপিত নুহাশপল্লীর বর্তমান আয়তন প্রায় ৪০ বিঘা। হাজার হাজার ফলজ গাছ,ঔষধি গাছ আর বনজ গাছে সবুজে একাকার একটি গ্রাম নুহাশ পল্লী। হুমায়ুন আহমেদ এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের একমাত্র পুত্র নুহাশের নামে নুহাশপল্লীর নামকরণ করা হয়েছে।
নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছেন স্যুটিং স্পট , দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। একটিতে তিনি নিজে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তার শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। আরও তৈরি করা হয়েছে রূপকথার মৎস্যকন্যা এবং রাক্ষসের ভাস্কর্য। এখানে আছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। সবুজের বুকে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নে গড়া এমন সুন্দর জায়গায় প্রিয়জনের সাথে খুব সুন্দর সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।
শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছেন ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। প্রতি বছর ১লা বৈশাখে নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো।
বর্তমানে নুহাশ পল্লী চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। নুহাশ পল্লীতে ঢুকে মাঠ ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলে হাতের বাম পাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নির্মাণ করা হয়েছে নামাজের ঘর। নামাজ ঘরের পাশেই তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান। লিচু বাগানের উত্তর দিকে জাম বাগান আর দক্ষিণ দিকে আম বাগান। ওই লিচুবাগানের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
নুহাশপল্লীতে যা যা দেখবেন ঃ
গ্রামের সুবিশাল সবুজ মাঠ আর খোলা প্রান্তর এবং প্রায় ২৫০ প্রজাতির গাছ।
হুমায়ুন আহমেদের কটেজ, ট্রি-হাউজ(গাছের উপর বাড়ি), দাবা খেলার কক্ষ এবং নামাজপড়ার কক্ষ। ডিম্বাকৃতির সুইমিংপুল। টিনশেডের বিশাল বারান্দাসহ "ভুতবিলাস" ও "বৃষ্টিবিলাস" কটেজ । মাটির ঘর দিয়ে তৈরি করা শুটিং স্টুডিও।
ঔষধি গাছের বাগান। মৎস্যকন্যার ভাস্কর্য এটির পাশে একটি রাক্ষসের মূর্তিও আছে। কনক্রিট দিয়ে তৈরি ডাইনোসারের মূর্তি। প্রাচীন দিঘির আদলে নির্মিত কিন্তু আধুনিক ঘাট সমৃদ্ধ দিঘাল দীঘি। লেকের মাঝে বসার জন্য একটি কৃত্রিম ছোট দ্বীপ । এছাড়াও রয়েছে শালবন, অর্কিড বাগান সহ এখানকার তিনটি বাংলো এবং খেজুর গাছ এবং চা গাছ লাগানো হয়েছে, যা এখনও আছে।
নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ মূল্যঃ
এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য নুহাশ পল্লী উন্মুক্ত থাকে। ১২ বছরের উপরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি ২০০/- টাকা ।
নুহাশ পল্লীতে গেলে যেখানে খাবেনঃ
শুক্র ও শনিবার ছাড়া নুহাশ পল্লীতে শুধু খাবার পাবেন। খাবারের ম্যানুঃ ভাত, ডাল, মুরগির রেজালা ১ পিস (৪:১ হিসেবে), আলুর ভর্তা, পেপে ভর্তা, শুঁটকির ভর্তা, ছোট মাছ ভুনা ইত্যাদি খাবারের প্যাকেজ এর মূল্য ২০০/- টাকা। আগে থেকে খাবারের অর্ডার করলে সপ্তাহের যে কোনো দিন এই খাবার এর বেবস্থা করা যায়।
নুহাশ পল্লীর অভ্যন্তরে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই আপনাকে যাওয়ার সময় সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে হবে । এছাড়া চাইলে নুহাশ পল্লীর অভ্যন্তরে আপনি রান্নাও করেও খেতে পারবেন।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী বাস অথবা ঢাকা ময়মনসিংহের জেকোন বাসে হোতাপাড়া বাজারে নেমে যেতে হবে । হোতাপাড়া বাজার হতে ছোট টেম্পুতে করে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারবেন । বাসে হোতাপাড়া বাজারে যেতে খরচ হবে ৫০/- টাকা থেকে ৭০/- টাকা।
হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত নুহাশপল্লীর অবস্তান । আপনারা চাইলে সিএনজি,টেম্পো, রিকশা , ভ্যান, অথবা অটোতে পৌছাতে পারবেন। টেম্পোতে উঠলে ভাড়া নিবে ৩০/- টাকা। সিএনজিতে খরচ হবে যথাক্রমে ৫০/- টাকা থেকে ৬০/- টাকা এবং রিকশায় গেলে ১০০/- টাকা থেকে ১২০/- টাকা নিবে।
নুহাশ পল্লীতে পিকনিক করার ব্যবস্থাঃ
নুহাশ পল্লীতে পিকনিকের ব্যবস্থা রয়েছে। এই জন্য কটেজের ৪ টি কক্ষ বরাদ্দ করা আছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এখানে পিকনিক করতে পারবেন । পিকনিকের জন্য একটি টিমে সর্বচ্চ ৩০০ জন থাকতে পারবে। সরকারি বন্ধের দিনে এখানে পিকনিক করতে ভাড়া দিতে হবে ৬০,০০০/- টাকা এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিনে এই ভাড়ার পরিমান ৫০,০০০/- টাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বন্ধের দিন পিকনিক করতে ভাড়া দিতে হবে ৫০,০০০/- টাকা এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিন ভাড়া দিতে হবে ৪০,০০০/- টাকা। এছাড়া নিজস্ব গাড়িতে করে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারেন। নুহাশ পল্লীতে পারকিং চার্জ সম্পূর্ণ ফ্রী ।
নুহাশ পল্লীতে পিকনিকের জন্য যোগাযোগের ঠিকানাঃ
সাইফুল ইসলাম বুলবুল, ব্যবস্থাপক, নুহাশ পল্লী।
মোবাইল: ০১৭১২০৬০৯৭১০১৭৩৮৭০৪০১০
0 Comments