Random Posts

ডিবির হাওর, জৈন্তাপুর - শাপলা বিল ভ্রমণ গাইড | Dibir haor sylhet travel guide

 ডিবির হাওর  ভ্রমণ গাইড

ডিবির হাওর সিলেট (Dibir Haor Sylhet )

ইতিহাস, ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ডিবির হাওরের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে এই এই শাপলার রাজ্য।

সিলেটের উত্তর পূর্বে অবস্থিত জৈন্তাপুর উপজেলা। এই উপজেলা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। ডিবির হাওর, ইয়াম, হরফকাটা কেন্দ্রী বিলসহ রয়েছে চারটি বিল। বিলগুলোকে কেন্দ্র করেই নাম করা হয়েছে ডিবির হাওরচারটি বিলের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে। বিলগুলো রূপ নিয়েছে শাপলার রাজ্যেবিলে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলাজৈন্তাপুরের ডিবির হাওরএখন পর্যটনকেন্দ্র।

এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। বিলগুলোর প্রায় ৯০০ একর ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলার জন্ম। সাথে বাড়তি আকর্ষণ হলো হাওরের পারেই পাহাড়ের সারি। ভারতের মেঘালয়ের সেই পাহাড় যেন মনে হয় সৃষ্টির আরেক স্বর্গ।

 

ডিবির হাওর সিলেট (Dibir Haor Sylhet )

প্রতিদিন একান্তেই ভোরে তার নিজ নিজ সৌন্দর্য্য নিয়ে ফুটে ওঠে অপূর্ব অগণিত ফুল, তাদের সাথে দেখা করতে প্রতিদিন ভোর হওয়ায় সাথে সাথেই দলবেধে নৌকায় ভেসে বেড়ান অগণিত ভ্রমণপিয়াসু।

এই বিলে আগে কোনো ধরনের শাপলা ছিল না। ৩০ বছর আগে সীমান্তের ওপারে খাসিয়া সম্প্রদায় লাল শাপলা দিয়ে পূজা-অর্চনা করত। খাসিয়া পরিবার ডিবি বিলে লাল শাপলার চারা রোপণ করেন পূজা-অর্চনায় ফুলের চাহিদা মেটাতে। সেই থেকে একে একে ডিবি বিল, কেন্দ্রি বিল, হরফকাটা বিল, ইয়ামবিলসহ পার্শ্ববর্তী জনসাধারণের পুকুর-নালা পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে লাল শাপলায়চারটি বিলের অন্তত ৭০০ একর জায়গা লাল শাপলা দখল করে আছে। জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিলো। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন একটি মন্দির ও আছে সেখানে।

প্রতিবছর অসংখ্য অতিথি পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। যার মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস পাতিসরালি, পানকৌড়ি, সাদাবক ও জল ময়ুরী।

 

ডিবির হাওর সিলেট (Dibir Haor Sylhet )

বর্ষাকাল শেষ হতেই হাওরে ফুটতে থাকে লাল শাপলা। শরতের শেষভাগ থেকে শীতের শুরু পর্যপ্ত শাপলা সৌন্দর্য ছড়ায়। তবে সবচেয়ে বেশি শাপলার দেখা মেলে হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ে। এ সময়ে ভিড় বাড়ে দর্শনার্থী আর প্রকৃতিপ্রেমির। 

ছুটির দিনে হাওরে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি ভিড় হয়। কেউবা সেন পরিবার নিয়ে মাইক্রোবাসে চড়ে , কেউ লেগুনায় বা সিএনজিতে। তবে মোটরসাইকেলে আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে

হাওরের ফুল এবং সৌন্দর্য রক্ষায় করা হয়েছে কমিটি। ডিবির হাওর লাল শাপলা সুরক্ষা কমিটির উদ্যোগে হাওরে ফুল ছিঁড়া বন্ধ করা হয়েছে। নৌকার মাঝিরাও পর্যটকদের ফুল ছিঁড়তে নিষেধ করেন। সুরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকেও সার্বক্ষণিক বিষয়টি নজরদারি করা হয়। 

ডিবির হাওরর কেন্দ্রী বিলে ডুবিয়ে হত্যা করা হয় জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজা রাম সিংহকে। এই হাওরে তার সমাধিসৌধ বলে উপজেলা প্রশাসনের সাঁটানো সাইনবোর্ড থেকে জানা যায়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই হাওরে রয়েছে রাজা বিজয় সিংহের সমাধিসৌধ। ১৭৭৪ সালে তিনি রাজা হন এবং মাত্র পাঁচ বছর রাজত্বের পর মারা যান। তার শাসন আমলে পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দাদের মাঝে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এরপর সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে তাকে কেন্দ্রী বিলে নৌকা বাইচের মধ্যে হত্যা করা হয়। তাকে সেখানেই রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। 

 

যেহেতু শীতকাল তাই নানা ধরণের পাখির দেখাও পাবেন আপনি এখানে। প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। ভোরের লাল শাপলা,পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে, সাথে পাখির কিচির মিচির এ যেন আসলেই এক প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য।

আকাশে মুক্ত ডানায় ভর করে বাতাসে গা ভাসিয়ে দলবেঁধে হেলে-দুলে মনের সুখে উড়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। ঝিলে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি মেলে ধরেছে সীমান্তের সৌন্দর্যকে।

এ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাওরের চারপাশে জমির ওপর হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখা যায় পাখিদের। ডানা ঝাঁপটিয়ে পাখিরা স্বাগত জানায় অতিথিদের। পাখিদের মুখরতায় ডিবির হাওর ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে পাখিময় উচ্ছল।


কিন্তু ডিবির হাওরের পরিযায়ী পাখির অবিরাম ছুটে চলা, খুনসুটি, জলখেলী আর ডুব সাতারের মনমুগ্ধকর দৃশ্য এখনও অনেকের অজানা।
শীতের এ মৌসুমে অতিথিদের বরণ করে নিতে ডিবির হাওরও যেন সেজেছে অপরুপ সাজে।
প্রাচীন রাজার মৃত্যুস্মৃতি বিজড়িত এ হাওর এখন পাখিদের রাজত্ব। সেখানে নিশ্চিন্তে বিচরণ করছে শীতের হাজার হাজার পাখি। বিশাল হাওর শুকিয়ে যেটুকু জলাশয় তার ওপরই পাখদের বিচরণ বেশি।

সমস্ত বিল জুড়ে ফুটেছে শত শত শাপলা। একটি ধ্বংসপ্রায় মন্দির আছে ডিবির হাওরের মাঝে। যেকেউ চাইলে মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন। জৈন্তা রাজ্যের এক রাজাকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিলো। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন এ মন্দিরটি এখন জীর্ণ-শীর্ণ।

ডিবির হাওর সিলেট (Dibir Haor Sylhet )

যেভাবে যাবেন : ঢাকা, চট্টগ্রাম দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যদি ডিবির হাওরে ঘুরে আসতে চান। তাহলে প্রথমেই আপনাকে বাস কিংবা ট্রেনে সিলেটে পৌঁছাতে হবে।

সিলেট শহরে পৌঁছে আপনি শহরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ থেকে, উত্তর সুরমার সোবহানীঘাট কিংবা টিলাগড় পয়েন্ট থেকেও জাফলংগামী বাস পাবেন। বাসটি জৈন্তাপুর বাজার হয়ে যাবে। আপনাকে সেখানেই নামতে হবে। লোকাল বাস ভাড়া ৫০ টাকা নিবে।

তবে এই বাসে করেই আপনি বিজিবি ক্যাম্প লিখা নামক জায়গায় নামতে পারেন। রাস্তার বিজিবি ক্যাম্প লিখা সাইনবোর্ডের ডান পাশের রাস্তা দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন লাল শাপলার বিল।

তবে সিলেট থেকে চাইলে সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে।

শাপলার বিলে পৌঁছে আপনাকে নৌকা ভাড়া করে পুরো বিলের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে হবে। হাওরের মাঝখান দিয়ে বহমান কাঁচা রাস্তা। রাস্তার বাম পাশে নৌকা নিয়ে ঘুরতে চাইলে ভাড়া নির্ধারিত করা ৪০০ টাকা আর ডান পাশে ঘুরতে চাইলে ভাড়া ৩৫০ টাকা।

বাম পাশ দিয়ে গেলে আপনি লাল শাপলার সাথে বাড়তি সোন্দর্য হিসেবে একটি পুরনো মন্দির পাবেন সেই সাথে খুব কাছ থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মিতালীর হাতছানিও পাচ্ছেন। মন্দিরে নেমে আপনি হাঁটতেও পারবেন কিছুক্ষণ। আর ডান পাশ দিয়ে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আপনি কেবল লাল শাপলার সৌন্দর্যটাই উপভোগ করতে পারবেন। তবে ডান পাশ দিয়ে গেলে বাম পাশের তুলনায় শাপলা বেশি পাচ্ছেন। কারণ মন্দির আর মেঘালয়ের দৃশ্যে দেখতে বাম পাশ দিয়ে পর্যটকদের আনাগুনা বেশি থাকায় ডান পাশের উদিয়মান শাপলাগুলো দীর্ঘক্ষণ অক্ষত থাকে।

খুব সকাল পৌঁছানোর পর আপনাকে শাপলার মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে তখনই রওনা করতে হবে। কেননা রোদ ওঠার সাথে সাথে শাপলার আসল সৌন্দর্য্য লোপ পেতে থাকে।

 


Post a Comment

0 Comments