চিত্রঃ জাহাঙ্গীরনগরে রাতে মুক্তমঞ্চ
দেশের একমাত্র সম্পূর্ণ আবাসিক ও প্রকৃতির নয়নাভিরামে ঘেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।আয়তনে(প্রায় ৭০০ একর) দেশের চতুর্থতম এবং ঢাকা বিভাগের সবচেয়ে বড় বিশ্বববিদ্যালয়টি হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার সাভারে অবস্থিত এখানে আছে দেশের সর্ববৃহৎ শহীদ মিনার, লেক, খাবারের সুব্যবস্থা, মনপুরা সহ সৌন্দর্যের রহস্যে ঘেরা প্রকৃতি।
এছাড়াও প্রায় ৭০০ জন মেধাবী শিক্ষক ও ১৭০০০ জন মেধাবী শিক্ষাথী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও পড়াশুনা করছেন।
চিত্রঃ শহীদ মিনার
শহীদ মিনার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে(নতুন কলা ভবন সামনে) অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহত্তম শহীদ মিনারটি দেশের ঐতিহ্যকে বহন করছে।মূল শহীদ মিনারে উঠতে ৮টি সিঁড়ি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ৮টি ঘটনা ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৪,
১৯৬২, ১৯৬৬,১৯৬৯,১৯৭০ ও ১৯৭১ এর ইতিহাস। আবার ভিত্তিমঞ্চ থেকে ৫২ফুট ব্যাস ৫২এর ভাষা আন্দোলনকে এবং ৭১ ফুট উচ্চতার মিনারটি ৭১ এর মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাসকে বহন করছে। শহীদ মিনারটির স্থপতি রবিউল হুসাইন। অন্যদিকে ৮টি সিঁড়ি ও ৩টি স্তম্ভ দৃঢ়তার প্রতীক ত্রিভুজ আকৃতির ঋজু কাঠামোটি বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের জন্য মহান বীর শহীদ-গণের আত্মত্যাগের মহিমার কথা বলছে। এমনকি মিনারটির ৩টি স্তম্ভ বাংলাভাষা-সাহিত্য- সংস্কৃতি ও অন্য ২টি
মাটি ও মানুষ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব -অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। মোট কথা শহীদ মিনারটি হচ্ছে দেশ ও মানুষের শত বছরের ভালোবাসার নিদর্শন।
সংশপ্তক
বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীর সামনে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য সংশপ্তক। প্রতিকৃতিটি মাটি থেকে ১৫ ফুট উপরে।ভাস্কর্যটির মূল অংশ ব্রোঞ্জ ধাতুতে তৈরি। তাছাড়াও ভিত্তিপ্রস্তরটি তৈরীতে লাল সিরামিক ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ভাস্কর্টিতে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধা এক পা, এক হাত হারিয়েও অন্য হাতে বন্দুকে গুলি ছুঁড়ছে মৃতু্্যর আগ পর্যন্ত লড়াই করাই যেন তার লক্ষ্য। ভিত্তি প্রস্তরটি হামিদুজ্জামান তৈরী করেছেন।
চিত্রঃ অমর একুশে
অমর একুশে
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফে ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মাঝখানে অবস্থিত অমর একুশে।
ছবিটিতে দেখা যায় ভাষার জন্য আন্দোলনরত সন্তান ঘাতকের গুলির আঘাতে মায়ের কোলে ঢলে পড়েছে। আর বাবা প্রতিবারস্বরূপ আন্দোলন করছে।
টিএসসি
চিত্রঃ মুক্তমঞ্চ
মুক্তমঞ্চঃ জাহাজ্ঞীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তৈরী করা ১ম সংস্কৃতি চর্চা ক্ষেত্র। মূলত গ্রীক এপিডোরাস থিয়েটারের আদলে নির্মিত খোলা আকাশের নিচে সিরামিকের লাল ইটের তৈরী মুক্তমুঞ্চ প্রতিদিনই মানুষকে অবাক করে। ১৯৮০ সালে শকুন্তলা নাটকের মাধ্যমের এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়। দেশের এমন কোন খ্যাতনামা শিল্পী নেই যে এক বারের জন্য এ মুক্তমঞ্চে আসেননি। বরঞ্চ এসেছেন বারবার। নিয়মিত এখানে অসংখ্য দর্শকের সমাগমে মুখরিত থাকে। শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু বলেছেন শিল্পী জীবনের সার্থকতা হচ্ছেঃ
"জাবির মুক্তমঞ্চে গান গাওয়া"
সপ্তম ছায়ামঞ্চঃ টিএসসিতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্মরণে একটি বট গাছে নিচে তৈরী করা ছোট মঞ্চ। মূলত যেখানে প্রায়ই আড্ডা ও সংস্কৃতির চর্চা করা হয়।
ক্যাফেটারিয়াঃ টিএসসিতে খুবই চারুকর্য খচিত ক্যাফে রয়েছে যেখানে কম মূল্যে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। আসলে ক্যাফেটারিয়া হচ্ছে ছোট বড় সমবয়সী
চিত্রঃ টিএসসি
এছাড়াও টিএসসির সুরম্য অট্টালিকায় ১০০ এর অধিক বিভিন্ন সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মতাদর্শের চর্চা করা হয়। এ কথায় টিএসসি হচ্ছে ক্যাম্পাসের জ্ঞানের পীঠস্থান।
পদ্ম ফোয়ারা
মানুষ প্রকৃতির মধ্যে বাঁচতে চায়। হয়তো এ কারণে বিধাতা আমাদের চারপাশে প্রকৃতির আচ্ছাদন করে দিয়েছেন। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ নিজেই কিছু সৌন্দর্য সৃষ্টি করে । এমন একটি সৃষ্টিশীল কাজ হলো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ্ম ফোয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ্মফুলের
সৌন্দর্যকে তুলে ধরতেই ২০১৩ সালে শিল্পী হাসান আব্দুল্লাহ আল-মাহ্দীর নকশায় পদ্ম ফোয়ারা নির্মাণ করা হয় ক্যাম্পাসে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরাঙ্গীর পাশে একটি ছোট পুকুরের মাঝে অবস্থিত। রাতে রঙিন আলোর ঝলকানিতে এটির সৌন্দর্য অতিমাত্রায় বর্ধিত হয়।
চিত্রঃ চৌরঙ্গী
চৌরঙ্গীঃ ভার্সিটির চৌরঙ্গীতে সুন্দর একটি রং মাখা দেয়ালে সদা হাসি মাখা মুখের প্রতিকৃতির ছবি। যা দেখে কারো মন খারাপ থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেয়ালটিকে ফুটিয়ে তুলেছে।
চিত্রঃ লন্ডন ব্রিজ
লন্ডন ব্রিজঃ ট্রান্সপোর্টের পাশেই কার্লভাটের মত একটি ছোট্ট ব্রিজ যাকে এখানকার ছাত্রছাত্রীরা আদর করে লন্ডন ব্রিজ বলে ডাকে, এরকম ব্রিজের সংখ্যা ও অগনিত, সুযোগ পেলেই ব্রিজের পাশে অনেকে বসে পড়ে, আড্ডা জমায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লন্ডন ব্রিজ হচ্ছে সবার কাছে দৃষ্টিনন্দন জায়গা। এখান থেকে অতিথি পাখি, শাপলা ও পদ্ম ফোটা লেক দেখা যায়। দূর থেকে গাছপালা গুলোর সৌন্দর্যকে দেখে মনে হয় যেন আমি এখন রাঙ্গামাটি আছি।
চিত্রঃ ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাগার
ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাগার
বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম গবেষণাগার যার নাম ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞানাগার। বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আন্তজার্তিক মানের গবেষণা কেন্দ্রটি।
চিত্রঃ মীর মোশাররফ হল
এছাড়াও ৭০০ আসনবিশিষ্ট জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে সাংস্কৃতিক চর্চা ,চলচ্চিত্রও আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আয়োজন। সেন্ট্রাল লাইব্রবেরীতে লক্ষাধিক বই এর সমারোহ, প্রজাপতির আদলে তৈরী দেশের অন্যতম বৃহত্তম হল মীর মোশাররফ হলে অপরিচিতরা যেকোন সময় হারিয়ে যেতে পারে। লাল সিরামিকের ইট দিয়ে তৈরী ক্যাম্পাসের প্রতিটি দেয়াল সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
ধন্যবাদান্তে
সজিব চৌধুরী
সাংবাদিকতা ও মিডিয়া অধ্যয়ন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
#ট্রাভেল_বাংলাদেশ
#Travel_Bangladesh
0 Comments