বিছনাকান্দি ভ্রমণ গাইড

ছবিঃ বিছনাকান্দি(Bichanakandi)

বিছানাকান্দি(Bichanakandi):
প্রকৃতির
আপন লীলাখেলায় মেতে আছে অপার সৌন্দর্যের জল এবং পাথরের জলা ভূমি বিছানাকান্দি যেন
একটি পাথরের বিছানা । ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ জলধারায় পা ফেললে মনে হবে পৃথিবীর সব শান্তি যেন এখানে । বিছানাকান্দির আসল সৌন্দর্য ফুটে উঠে বর্ষার সিজনে । সিলেট বাস
স্টেশন থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬৪ কিমি । বিছানাকান্দি যাওয়ার রাস্তার অবস্থা
ব্যাপক খারাপ । তবুও বিছানাকান্দির সৌন্দর্যের অপার লীলা-ভূমি দেখলে পর্যটকদের সব ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে
যায় ।
বিছানাকান্দি বেড়াতে গেলে সাথে বোনাস হিসাবে পান্থুমাই ,লক্ষণ ছড়া এবং ফেরার পথে অবশ্যই রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট , চা বাগান ঘুরে দেখবেন।
বাসের রুটে সিলেটঃ
ঢাকা
থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৪৩ কিঃ মিঃ । ঢাকার গাবতলী,ফকিরাপুল,মহাখালী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাস ছেড়ে যায় ৷ বাস গুলো সকাল থেকে রাত ১২.৪৫
পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর সিলেটের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায় ৷ ঢাকা সিলেট রুটে সৌদিয়া, এস আলম পরিবহন, গ্রীন লাইন পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ,
ইউনিক সার্ভিস, এবং এনা পরিবহনের বাস চলাচল করে । এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে উত্তরা, টঙ্গী ঘোড়াশাল
হয়ে সিলেট যায় । এসি বাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা । নন এসি বাসের ভাড়া ৪৭০
থেকে ৫০০ টাকা।
বাস আপনাকে সিলেটের কদমতলী,হুমায়ন চত্বর অথবা আম্বরখানা বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিবে সেখানেই সিনজি রিজার্ভ করে ফেলবেন । যদি সিনজি না পান তবে আম্বরখানা বাস স্ট্যান্ড হতে বিমান বন্দর সড়ক এর দিকে ১ টা সিনজি স্ট্যান্ড আছে সেখানে চলে যাবেন আশাকরি সিনজি পেয়ে যাবেন।
ট্রেনের রুটে সিলেটঃ
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস যায় সিলেটের উদ্দেশ্য। প্রতিদিন দুপুর ২ টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস , শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪ টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ০৯ঃ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস।
ট্রেন এর টিকেটের মূল্য:
১১০০ টাকা(এসি বার্থ), ৭৩৬ টাকা(এসি সিট), ফার্স্ট ক্লাস বার্থ ৬৪০ টাকা, ফার্স্ট ক্লাস সিট ৪২৫ টাকা. স্নিগ্ধা ৬১০ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০ টাকা, শোভন ২৬৫ টাকা, সুলভ ১৬০ টাকা। ট্রেনে গেলে রাত ৯ঃ৫০ এর উপবন এক্সপ্রেসে জাওয়াটাই সবচেয়ে বেস্ট , কারণ ঘুমটা ট্রেনেই সেরে নিতে পারবেন। উপবন এক্সপ্রেস আপনাকে ভোর ৫ঃ৩০ মিনিটে সিলেট নামিয়ে দিবে।
বিমান যোগে সিলেটঃ
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার,রিজেন্ট এয়ার এবং ইউএস বাংলার বিমান প্রতিদিন সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে যায় । টিকিটের মূল্য ৩,০০০ থেকে শুরু করে ৭,০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে বিভিন্ন ক্লাস ভেদে।
ট্যুর প্ল্যানঃ
ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট বাসে যান বা ট্রেনে অবশ্যই রাতে রওনা করবেন। এতে করে ঘুমিয়ে নিতে পারবেন এবং সকালে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই সারাদিন কাজে লাগাতে পারবেন।
সিলেট শহর থেকে সারা দিনের জন্য সিএনজি /লেগুনা/মাইক্রো রিজার্ভ করে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, বিছানাকান্দি এবং পান্থুমাই ঝর্ণা দেখে। রাতে সিলেট শহরে ফিরে রাতের খাবার সেরে ঢাকার উদ্দেশ্য রাওনা দিতে পারেন ।
কিভাবে যাবেনঃ
সিলেট থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬৪ কিমি এর ! বিছানাকান্দি এবং পান্থুমাই , লক্ষণছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে সিনজি যোগে যেতে হবে পীরের বাজার গোয়ানি ঘাঁট অথবা হাদারপাড় বাজার । তবে হাদারপাড় বাজার থেকে বোটে উঠার চেষ্টা করবেন কারণ হাদারপাড় বাজার হতে বিছানাকান্দি কাছে। সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার যেতে পারবেন । সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিলে সাধারণত ভাড়া প্রায় ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকার মত লাগবে। সারাদিনের জন্য লেগুনার রিজার্ভ ভাড়া ৩০০০ - ৪০০০ টাকা । সিলেট শহর থেকে মাইক্রো বা লেগুনা ভাড়া করেও গোয়াইনঘাট অথবা হাদারপার নৌকা ঘাটে নামতে পারেন।
নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা করে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের ভিতরেই বিছানাকান্দি যাওয়া যায়। নৌকা দরদাম করে নিতে ভুলবেন না। এখানে প্রচুর সিন্ডিকেট হয়। প্রায় ২/৩ গুন দাম হাকাবে। শুধু বিছানাকান্দি যেতে বোট ভাড়া ১০০০ - ১২০০ টাকা । পান্থুমাই, লক্ষণ ছড়া, এবং বিছানাকান্দির জন্য সারাদিন ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা । ১ বোটে ১৫-২০ জন বসা যায়। নৌকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে 01727567502 ( আব্দুল রশিদ)
পান্থুমাই ঝর্ণাঃ
পান্থুমাই ঝর্ণাটি পুরোপুরি ভারতেই অবস্থিত। ভরা বর্ষায় না গেলে এর প্রকৃত রূপ দেখা যায় না। পান্থুমাই পয়েন্টে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে শুধু দেখাই যায়, । এটি বিছানাকান্দি যাওয়ার আগে অথবা বিছানাকান্দি থেকে ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন। বিছানাকান্দি থেকে ট্রলারে ছড়ে পান্থুমাই যেতে প্রায় ১ ঘন্টার মত সময় লাগে।
কোথায় থাকবেনঃ
সারাদিন বেড়ানো শেষে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেটে। সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে,সিলেটে আপনি আপনার প্রোয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি। তবে ঈদের সময় সিট সংকট থাকতে পারে তাই যাওয়ার ২/৩ দিন আগে এডভান্স বুকিং দিলে ভালো হয়৷ লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷
লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক হোটেল পাবেন। হোটেল অনুরাগ সিঙ্গেল রুম ৪০০ টাকা ২ জন থাকা যাবে ১ রুমে । ৩ বেডের রুম ৫০০ টাকা ৪ জন থাকা যাবে । এ ছাড়া দরগা রোডে অনেক হোটেল রয়েছে যেখানে রুম ভাড়া ৫০০ থেকে শুরু ।
সিলেট শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন ০৮২১-৭১৫৫৯০। জেল সড়কে হোটেল ডালাস ০৮২১-৭২০৯৪৫। ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন ০৮২১-৭১৮২৬৩। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন ০৮২১-৮১৪৫০৭। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ ০৮২১-৭১৮৩০৯। দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট ০৮২১-৭১৭০৬৬। হোটেল উর্মি ০৮২১-৭১৪৫৬৩। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট ০৮২১-৭১৪৮৫০। তালতলায় গুলশান সেন্টার ০৮২১-৭১০০১৮, ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে।
সিলেট শহরে থাকার আবাসিক হোটেল:
▶️ হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (বন্দর, শিশুপার্কের কাছে): ০১৭৩১৫৩৩৭৩৩, +৮৮০৮২১২৮৩৩৪০৪
▶️ হোটেল নির্ভানা ইন (রামের দিঘির পাড়, মির্জা জাঙ্গাল, সিলেট): +৮৮০৮২১২৮৩০৫৭৬, ০১৭৩০০৮৩৭৯০, ০১৯১১৭২০২১৩, ০১৭১১৩৩৬৭৬১
▶️ হোটেল স্টার প্যাসিফিক (ইস্ট দরগাহ গেইট): ০১৭১৩৬৭৪০০৯, ০১৯৩৭৭৭৬৬৩৩, ০৮২১-২৮৩৩০৯১
▶️ হোটেল অনুরাগ (ধোপা দীঘি নর্থ): ৭১৫৭১৭, ৭১৪৪৮৯, ০১৭১২০৯৩০৩৯
▶️ হোটেল সুপ্রীম, জাফলং রোড, মিরাবাজার, সিলেট-৩১০০, মোবাইল: ০১৭১১১৯৭০১২, ফোন: ৮৮-০৮২১-৭২০৭৫১, ৮১৩১৬৯, ৮১৩১৭২, ৮১৩১৭৩, ৮১৩১৬৮
▶️ হোটেল সানফ্লাওয়ার (বন্দর, শিশুপার্কের কাছে): ফোন:৮৮-০৮২১-৭১৩৯১৪
▶️ হোটেল এশিয়া (বন্দরবাজার): ০১৯২২৫৯৫৮৪১, ০১৯২২৫৯৫৮৪০
▶️ সুরমা ভ্যালি গেস্ট হাউস (জেলা প্রশাসক/পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে): ০১৭১৬০৯৫৮৩৬
▶️ হোটেল সিলেট ইন (মিরবক্সটুলা): ফোন: ৮৮-০৮২১-৮১১৯৪৫
▶️ হোটেল আল-আরব: হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার শরীফ পূর্ব দরগাহ্ হেইট, সিলেট,ফোন: ০৮২১-৭২৪০৫৯, ০১৭২১৮১২৬৬২
▶️ হোটেল উর্মি: হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার শরীফ পূর্ব দরগাহ্ হেইট, সিলেট, ফোন: ০৮২১-৭১৪৫৬৩, ০১৭৩৩১৫৩৮০৫
রিসোর্ট:
▶️ নাজিমগড় রিসোর্ট : ফোন: ০১৯১৬২৭১৯৩৫, ০১৭২৯০৯৭৮৪৯
▶️ জাকারিয়া স্টেট: ফোন: ০১৭১৬৮১০১৪৪
রেন্ট-এ-কার এর জন্য যোগাযোগ করুন:
- জনাব রাজ্জাক: ০১৭১৫৬০০৫৮০
- জনাব সিরাজী ০১৭২৩৩৬৫৬৫৪
- জনাব কবির ০১৭১২৩১৬৭৩২
- জনাব শামিম ০১৭১৪৭৭০১৫৫
সিলেট গেলে যেখানে খাবেনঃ
খাওয়ার জন্য সিলেট শহরে বেশ ভালো খাওয়ার হোটেল আছে। হোটেল গুলো হচ্ছে পাঁচ ভাই,পানশি, পালকি ও ভোজনবাড়ী ইত্যাদি অন্যতম। পানশীতে অবশ্যই বিভিন্ন প্রকারের ভর্তা এবং কবুতরের মাংস খেতে ভুলবেন না। পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে রুটি দিয়ে গরুর নিহারি এবং ভুনা চিকেন খিচুড়ি বেশ জনপ্রিয় । ভোজনবাড়ীতে বিভিন্ন প্রকার মাছ বিখ্যাত।
হাদার পাড় বাজারে গনি মিয়াঁর খিচুড়ি খুব বিখ্যাত। যদি খাবার সময় পান তবে যাওয়ার সময় খেতে পারেন অথবা পার্সেল করে বিছানাকান্দি নিয়ে যেতে পারেন । তবে বিছানাকান্দিতেও কয়েকটি অস্থায়ী খাবার হোটেল রয়েছে।
Vlog Tag:bichanakandi,বিছানাকান্দি,ratargul,sreemangal,sylhet,trip,pangthumai sylhet,panthumai sylhet,sylhet tour,meghalaya,meghaloy,পান্থুমাই,panthumai falls,bisnakandi,top 10 tourist place in sylhet,sylhet travel,best travel place in sylhet,travel,বিছানাকান্দী,bangladesh,রাতারগুল,সিলেট,জাফলং ঝর্না,sangrampunji waterfall,tamabil,lalakhal,সারীঘাট,তামাবিল,জাফলং,লালাখাল,jaflong,jaflang,লক্ষণছড়া,Lokkhon Chora
0 Comments