Random Posts

চন্দ্রনাথ পাহাড় - ভ্রমণ গাইড , চন্দ্রনাথ মন্দির , সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম | Chandranath Hill/Temple Bangladesh Travel Guidelines | Places to visit in sitakunda mirsharai , Chittagong

চন্দ্রনাথ পাহাড় - ভ্রমণ গাইড , চন্দ্রনাথ মন্দির , সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ড(sitakunda) চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ স্থান যা সীতাকুণ্ড শহরের পূর্বে অবস্থিত । চন্দ্রনাথ শৃঙ্গ প্রায় ১১৫২ফুট (প্রায়) উঁচু এবং সীতাকুণ্ড পাহাড়টি হিমালয়ের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে মিশেছে। এই পাহাড়ের পাদদেশে সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের অবস্তান । 

সীতাকুণ্ডে যে কয়েকটি পর্যটন স্পট রয়েছে টার মধ্য চন্দ্রনাথ পাহাড় এক নাম্বারে থাকবে এই ব্যপারে সন্দেহ নেই কারো । সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি এই এলাকাকে হিন্দুদের বড় তীর্থস্থান বলাই ভালো । প্রায় ১২০০ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় হিন্দু ধর্মের পবিত্র স্তান চন্দ্রনাথ মন্দিরের অবস্তান। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির যার মধ্য ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবাশ্রম, ভোলানন্দ গিরি সেবাশ্রম, শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, ইত্যাদি সহ আরো অসংখ্য মন্দির এবং সেবাশ্রম রয়েছে সীতাকুণ্ডে । হিন্দু ধর্মের পবিত্র গ্রন্থসমূহ অনুসারে সতী দেবীর দক্ষিণ হস্তার্ধ পতিত হয়েছিল এই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে । চন্দ্রনাথ মন্দির তীর্থযাত্রীদের জন্য এক পবিত্র স্থান। সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস(বাংলা ফাল্গুন মাসে) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকে। যেটি শিবর্তুদশী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশহ বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী যোগদান করেন। এই মন্দিরের পুরনো নাম ছিলো "সীতার কুন্ড মন্দির"। 

সীতাকুণ্ডের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

প্রাচীন নব্যপ্রস্তর যুগে সীতাকুণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। এখান থেকে পাওয়া প্রস্তর যুগের হাতিয়ার গুলো তারই স্বাক্ষর বহন করে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম শতাব্দীতে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম এরিয়া আরাকান রাজ্যের অধীনস্ত ছিল । ৭৭০ থেকে ৮১০ খ্রিঃ এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় পাল সম্রাট ধর্মপাল দ্বারা এর হাতে । সোনারগাঁও এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ্ ১৩৪০ খ্রিঃ এই অঞ্চল দখল করেন। পরবর্তীতে ১৫৩৮ খ্রিঃ সুলতান গীয়াস উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ্ পরাজিত হলে হলে এই এলাকা পুনরায় আরাকান রাজ্যের হাতে চলে যায় । পরবর্তীতে ১৫৩৮ খ্রি: থেকে ১৬৬৬ খ্রি: পর্যন্ত এই অঞ্চল পর্তুগীজ ও আরাকানী বংশধররা একসাথে শাসন করে। ১৬৬৬ খ্রি: মুঘল সেনাপতি বুজরুগ উন্মে খান আরাকানীদের এবং পর্তুগীজদের হারিয়ে এই অঞ্চল দখল করে নেন। 

 

বাস যোগে ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড:

যেহেতু এই বীচ সীতাকুণ্ডে তাই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমে আসতে হবে সীতাকুণ্ডে।  ঢাকা থেকে শিতাকুন্ড  নন এসি বাসের ভাড়া ৪৮০ টাকা,এসি বাস ভাড়া ৮০০ – ১৩০০ টাকা 

ট্রেন যোগে ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড:

ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডে কোন ভালো মানের ট্রেন দাঁড়ায় না । ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড মেইল ট্রেনে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়ায় সীতাকুণ্ড আসতে পারেন। মেইল ট্রেনে সিট পাওয়া যায় না বিধায় ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে ফেনী গিয়ে ফেনী মহিপাল থেকে চট্টগ্রাম গামী বাস ধরে সীতাকুণ্ড যেতে পারেন ।  ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে করে ফেনী যেতে পারবেন, শ্রেনী ভেদে ভাড়া ২৬৫-৮০০ টাকা। ফেনী থেকে লোকাল বাসে  সীতাকুণ্ড যেতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা ভাড়া লাগে। 

চট্রগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডঃ

চট্রগ্রামের অলংকার মোড়, এঁকে খান মোড়, কদমতলী থেকে ফেনী গামী বাসে চড়ে সীতাকুণ্ড যেতে পারেন । বাসের মান ভেদে ভাঁড়া ৪০-৮০ টাকা নিবে । তাছাড়া সিএনজি,প্রাইভেট কার এবং মেক্সি নিয়েও সীতাকুণ্ড যেতে পারবেনসীতাকুণ্ড বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত সিএনজি ভাঁড়া  ২৫০-৩০০ টাকা নিবে।

সীতাকুণ্ড বাজার হতে চন্দ্রনাথ পাহাড় যাওয়ার উপায়ঃ 

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্তান সীতাকুণ্ড বাজারের ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে । সকাল ভোরে সীতাকুণ্ড বাজারে নাস্তা সেরে নিবেন । নাস্তা করতে গিয়ে সীতাকুণ্ড বাজারে ভিড় দেখা গেল তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমন চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখতে লোকেরা ভিড় করবে এটাই স্বাভাবিক। নাস্তা সেরে সীতাকুণ্ড বাজার হতে মাত্র ১৫-২০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে যেতে পারবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাপদেশে । তবে সকাল ৭ টার আগে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে (chandranath hill) উদ্দেশ্যে ট্র্যাকিং শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কারণ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক বার ছিনতাইয়ের ঘঠনা ঘটেছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সাধারণত খুব ভোরে যখন পর্যটকদের খুব একটা আনাগোনা থাকে না তখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে । 

সকাল ৭ টার পরে পর্যটকদের অনেক গুলো টিম রাওনা দেয় তাই ৭ টায় রাওনা দেয়াই উত্তম । চাইলে ৫০০ টাকা দিয়ে এক জন গাইড ঠিক করে নিতে পারেন । যদিও গাইডের দরকার নেই , কিন্তু যাদের এটা প্রথম পাহাড়ে ট্রেকিং তাদের রিস্ক না নেয়াই উত্তম । ট্র্যাকিং শুরু করার আগে ১০ টাকা দিয়ে ১ টি বাঁশ কিনে নিবেন যা আপনাকে পাহাড় ট্র্যাকিং করতে সহায়তা করবে । সাথে কমপক্ষে ১ লিঃ পানি নিতে ভুলবেন না। ট্র্যাকিং শুরু করার ৩০ মিনিট পর একটা ঝর্না পাবেন যার দু পাশে দুটো রাস্তা উপরে উঠে গেছে। দুটো দিয়েই চূড়ায় যাওয়া যায়। বাঁপাশের রাস্তা দিয়ে সময় বেশি লাগলেও কষ্ট কম হয় , তাই চেষ্টা করবেন বাম পাশের রাস্তা দিয়ে উঠতে। 

অনলাইনে চন্দ্রনাথ নিয়ে যতগুলো পোষ্ট দেখবেন সবগুলোতেই বলা আছে চন্দ্রনাথের (chandranath hill) ট্রেকিংটা অনেক কষ্টের কিন্তু বাস্তবে ততটা কঠিন নয়। কিছুক্ষণ পর পর ৫-১০ মিনিট করে রেস্ট নিলে তেমন কস্ট হয় না । চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চুড়ায় উঠার পর মনে হবে যে এত সুন্দর জায়গাও হতে পারে..! চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চুড়ায় উঠলে মনে হবে যেন আপনি সাদা মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা একটি দ্বীপে অবস্তান করছেন । চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চুড়ায় ২/১ ঘণ্টা অবস্তান করে এখানে থেকে কখনোই তৃপ্তি মেটানো সম্ভব না। 

কোথায় খাবেনঃ

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চুড়ায় খাবারের কোনো সুব্যবস্থা নেই। সুতরাং খাওয়ার জন্য সীতাকুণ্ড বাজারে ফিরে আসতে হবে । সীতাকুণ্ড বাজারে আল-আমিন হোটেলে ভালো মানের খাবার পাবেন ।

কোথায় থাকবেনঃ

থাকতে চাইলে সীতাকুণ্ড বাজারে সাইমুন এবং সৌদিয়া হোটেলে থাকতে পারবেন। সাইমুনে ৬০০ টাকায় রুম পাবেন আর সৌদিয়ায় রুম পেতে আপনাকে গুনতে হবে ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকা। বুকিং দিতে ফোন করতে পারেন 01991-787979, 01816-518119 নাম্বারে। আরো ভালো কোথাও থাকতে চাইলে আপনাকে চট্রগ্রাম চলে যেতে হবে। 

ভ্রমণ পরিকল্পনাঃ

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের আশেপাশে ভ্রমণ স্থান গুলোর মধ্যে আছে, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়,খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, সহস্রধারা ঝর্ণা, ঝরঝরি ঝর্না,বোয়ালিয়া ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা,হরিণ মারা ঝর্ণা,মধুখইয়া ট্রেইল, বাড়বকুন্ড ট্রেইল,কুমিরাকুণ্ড, কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট, মহামায়া লেক ইত্যাদি। আপনার সময় ও চাহিদা অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা।

 


ট্র্যাভেল বাংলাদেশ টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের মেইল করুন chsaiful@gmail.com। আমরা ঠিক করে নিবো ।

দৃষ্টি আকর্ষণ : আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো  আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না । দেশ আমাদেরদেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।

সতর্কতাঃ হোটেলরিসোর্টযানবাহন ভাড়া সহ অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ট্র্যাভেল বাংলাদেশে প্রকাশিত তথ্য বর্তমান সময়ের সাথে মিল নাও পেতে পারেন। তাই অনুগ্রহ করে আপনি ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে পরিকল্পনা সাজাবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেলরিসোর্টযানবাহনের জন্য যোগাযোগের নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে ভালো ভাবে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন প্রকার আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ট্র্যাভেল বাংলাদেশ দায়ী থাকবে না।


Vlog Tag; #সীতাকুণ্ড_চন্দ্রনাথ_পাহাড়, #চন্দ্রনাথ_পাহাড় , #chandranath_pahar,kumira hotel,cheap hotel in sitakundo,সীতাকুণ্ড আবাসিক হোটেল,shitakundo hotel,সীতাকুণ্ড হোটেল,সীতাকুণ্ডে থাকার যায়গা,shitakundo hotel review,chandranath temple,সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়,চন্দ্রনাথ মন্দির,সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক,সীতাকুণ্ড,chandranath,sitakundu,chandranath hill,চন্দ্রনাথ পাহাড়,chandranath pahar,how to go to the chandranath pahar mandir,shitakunda hill,sitakunda & mirsharai expedition,pilgrims of mythical chandranath hill,sitakunda town

Post a Comment

0 Comments